• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কুমিল্লার সাত উপজেলায় ২০ লাখ মানুষ অগ্নিঝুঁকিতে


কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২২, ০১:৫৭ পিএম
কুমিল্লার সাত উপজেলায় ২০ লাখ মানুষ অগ্নিঝুঁকিতে

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, দেবিদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়া, তিতাস ও লালমাই উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কোনো স্টেশন নেই। প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষা, ভূমি অধিগ্রহণ ও জটিলতার কারণে এসব উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করা যাচ্ছে না। এছাড়া জেলার মনোহরগঞ্জ ও মেঘনা উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়নি।

এসব উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকায় কোনো ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে অন্য উপজেলা থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়। ততক্ষণে ভুক্তভোগীদের সাজানো সংসার পুড়ে ছাইতে পরিণত হয়। এতে সাত উপজেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন।

গত ছয় মাসে এসব উপজেলায় অন্তত ৩০টিরও বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় ভূমি অধিগ্রহণসহ আইনি জটিলতা শেষ করার মাধ্যমে ফায়ার স্টেশন স্থাপনে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৬ মাসে জেলার দেবিদ্বার উপজেলায় আটটি, নাঙ্গলকোটে সাতটি, লালমাইতে পাঁচটি, ব্রাহ্মণপাড়ায় পাঁচটি, তিতাসে তিনটি ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় দুটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর ব্রাহ্মণপাড়ার সাহেবাবাদে ৩৬ দশমিক ৩৬ শতক এবং একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি তিতাসের বন্দরামপুর মৌজায় ৪০ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তিতাসে নির্ধারিত জমিতে অবকাঠামো নির্মাণে প্রকল্প পাশ হলেও অজ্ঞাত কারণে ওই প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হয়। ফলে ওই জায়গায় সাইনবোর্ড ছাড়া আবকাঠামো উন্নয়ন দৃশ্যমান নয়। তবে ওই উপজেলায় স্টেশন কর্মকর্তা ছাড়া বাকিদের নিয়োগ প্রক্রিয়াও এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। নিজস্ব ভবন না থাকায় তারা বর্তমানে জেলার বিভিন্ন ফায়ার সার্ভিস অফিসে কাজ করছেন।

এছাড়া দেবিদ্বারের ভারেরা মৌজায় ৪০ শতক এবং নাঙ্গলকোটের হরিপুর মৌজায় ৩৩ শতক জমি অধিগ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে প্রস্তাব পাঠানোর পর অনুমোদন পাশ হয়েছে। বর্তমানে এ দুই উপজেলায় জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন আছে।

এদিকে মেঘনা উপজেলার চরকাঁঠালিয়া মৌজায় ৩৩ শতক জমিতে ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর ফায়ার স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের জুন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর স্টেশনটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। ২০১৯ সালের জুন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারের পক্ষ থেকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর মাসে। তবে এরই মধ্যে স্টেশনটিতে জনবল নিয়োগ হলেও কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

লালমাই উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপনের জন্য এরই মধ্যে প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেলে জমি অধিগ্রহণসহ সব কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা হবে।

অন্যদিকে মনোহরগঞ্জ উপজেলার দিশাবন্দ মৌজায় ৩৩ শতক জমিতে ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ফায়ার স্টেশন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের জুন মাসে এটি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসেও এ স্টেশনের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়নি।

এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ উপজেলায় নির্মাণাধীন ফায়ার স্টেশনের ঠিকাদার কামাল হোসেন বলেন, “মাটি সমস্যার কারণে দীর্ঘ সময় লেগেছে। বর্তমানে কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। আশা করছি আগামী পনেরো দিনের মধ্যে কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দিতে পারবো।”

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী বলেন, “২০০৯ সালে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায় ফায়ার স্টেশন স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সাহেবাবাদ মৌজায় ৪০ শতক জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। এরপর থেকে অদ্যাবধি ফায়ার স্টেশন স্থাপন হয়নি। এ এলাকায় অগ্নিকাণ্ড ঘটলে অন্য উপজেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহায়তা নিতে হয়। ততক্ষণে ভুক্তভোগীদের মূল্যবান জিনিসপত্র আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তাই সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ থাকবে নির্ধারিত জায়গায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফায়ার স্টেশন স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”

কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, “কুমিল্লায় ১৭ উপজেলার ১০টিতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন আছে। বাকি সাত উপজেলার মধ্যে মেঘনা উপজেলায় নির্মাণ কাজ শেষ। ওই স্টেশনে জনবলও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি শিগগির এটি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন।”

মো. আক্তারুজ্জামান আরো বলেন, “মনোহরগঞ্জ উপজেলার স্টেশন স্থাপনের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। তিতাসেও নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে আশা করছি নির্ধারিত স্থানে আগামী বছর ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে অন্য উপজেলাগুলোতেও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” 

Link copied!